‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের প্রতিনিধিরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এফডিসি-পলাশী সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয় যে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধারে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলমান রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজ বলছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞার সত্ত্বেও প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিলের উন্মুক্ত জলাধার ধ্বংস হচ্ছে। অথচ প্রকল্পটির কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। মূল ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। তারপর থেকে অবৈধভাবে কাজ চলছে। এ বিষয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তিন মাসের জন্য পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কদের অভিযোগ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছে। বক্তারা বলেন, এফডিসি-পলাশী ফ্লাইওভার বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইডেন কলেজ, কাঁঠালবাগান-নীলক্ষেতসহ আশপাশের শিক্ষা ও আবাসিক এলাকাগুলো মহাসংকটে পড়বে। জলাধার ভরাট ও সবুজ ধ্বংসের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি হবে। তারা অভিযোগ করেন, ২০১১ সাল থেকে প্রকল্পটি বারবার নবায়নের নামে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। ১২৮ একর রেলওয়ের জমি বিনামূল্যে দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় করা হয়েছে। পিপিপি নীতিমালা ভঙ্গ, বৈষম্যমূলক চুক্তি, দুর্নীতি ও বিদেশি কোম্পানির দায়মুক্তির মতো বিষয়ও যুক্ত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকারও বিগত সরকারের পথেই হাঁটছে। বর্তমান উপদেষ্টারাও আগের সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের সুরে কথা বলছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পরিবেশ একের পর এক প্রকল্পে ধ্বংস হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় ফ্লাইওভারের এ অংশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শায়ের গফুর বলেন, বিদেশি সংস্থাগুলো এখানে অপকর্মের সুযোগ পাচ্ছে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কারণে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশাবহির্ভূত এই র্যাম্প পান্থকুঞ্জে যুক্ত করা হয়েছে কেবল কোম্পানির মুনাফার জন্য। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জে কাজ চালানো হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। প্রাণ-প্রকৃতিবিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, পান্থকুঞ্জের পূর্ণবয়স্ক প্রায় দুই হাজার গাছ ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। এতে বহু পাখি, পতঙ্গ ও বাদুড় আশ্রয় হারিয়েছে, যা প্রাণিকল্যাণ আইনেরও লঙ্ঘন। বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ১৬৮ দিনের অবস্থান কর্মসূচি ও সরকারের কাছে একের পর এক চিঠি পাঠানোর পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কাজ চালানো হচ্ছে, যা আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞার পরিচায়ক। আমার বাঙলা/আরএ
from Amarbangla sodesh Feed https://ift.tt/7g6GyzA
পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধার হুমকির মুখে!
September 21, 2025
0