Type Here to Get Search Results !

নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি সংশোধন করে চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, নির্বাচনে দলের সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে কোনো লিফলেট বা প্রচারসামগ্রী বিতরণ করা যাবে না এবং হেলিকপ্টারে ঝোলানো যাবে না কোনো ব্যানার। এর আগে শুধু দলীয় প্রধান বা সমপর্যায়ের নেতাদের হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি ছিল। হেলিকপ্টারের বহুমুখী ব্যবহার ১৯৯৯ সালে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে হেলিকপ্টারসেবা চালু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। এরপর ধীরে ধীরে খাতটি সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩টি বেসরকারি কম্পানি হেলিকপ্টারসেবা দিচ্ছে। তাদের বহরে রয়েছে প্রায় ৩৫টি হেলিকপ্টার। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৪২, যার মধ্যে কার্যক্রমে রয়েছে প্রায় ৩৫টি, যা পরিচালনা করছে ১৩টি ব্যাবসায়িক গ্রুপ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্কয়ার এয়ার, মেঘনা এভিয়েশন, আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ, ইমপ্রেস এভিয়েশন, বিআরবি এয়ার, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস, পারটেক্স এভিয়েশন, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস, আকিজ, পিএইচপি, ফ্লাই ট্যাক্সসি এভিয়েশন ও প্রবাসী হেলিকপ্টার। এ ছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) পেয়ে বেক্সিমকো এভিয়েশন বাজারে যুক্ত হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী বা ক্রেতাদের কারখানায় আনা-নেওয়া, ঈদের আগে বাড়ি ফেরা, ওয়াজ মাহফিল, রাজনৈতিক সমাবেশ, নাটক-সিনেমার শুটিং, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে দ্রুত ঢাকায় আনা কিংবা বিয়ের মতো ব্যক্তিগত আয়োজনেও এখন হেলিকপ্টারের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য মতে, সময়সাশ্রয়ী যাতায়াত, আয়ের স্তর বৃদ্ধি এবং করপোরেট ভ্রমণের চাহিদা বেড়ে যাওয়াও এই খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে। বছরের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি—এই সময়টায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বুকিংয়ের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি ব্যাবসায়িক কাজে বিদেশি ক্রেতাদের কারখানা ভ্রমণ, করপোরেট ও পর্যটন মৌসুম হেলিকপ্টার খাতের জন্য ‘পিক সিজন’। সেবায় সামাজিক উদ্যোগ : ইমপ্রেস এভিয়েশন খুলনা অঞ্চলের অসহায় রোগীদের জন্য বিনামূল্যে হেলিকপ্টারসেবা চালু করেছে। আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এই সেবা পরিচালিত হচ্ছে। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স সেবার বাড়তি চাহিদা : অপারেটরদের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে হেলিকপ্টারের ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে। হঠাৎ হৃদরোগ, স্ট্রোক, দুর্ঘটনা বা প্রসবজনিত জটিলতায় রোগীকে ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে আনার ক্ষেত্রে অনেক পরিবার এখন হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভর করছে। বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাকের রোগী বা দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তিকে দু-এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় নিতে পারা জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা কয়েক গুণ বাড়ায়। প্রতিদিন গড়ে অন্তত দুই-তিনটি এ ধরনের এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পরিচালিত হচ্ছে বলে অপারেটররা জানায়। এভিয়েশনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হেলিপ্যাড ও মেডিভ্যাক হাব তৈরি হলে এই সেবা আরো সহজ হবে। এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব মফিজুর রহমান বলেন, ‘কখনো কখনো রোগী যাত্রাপথে মারা যায়। হাসপাতালের ওপর এখনো হেলিকপ্টার নামানো যায় না। হাসপাতাল বা করপোরেট ভবনের ছাদে হেলিপোর্ট তৈরির অনুমতি দিলে রোগী পরিবহন সহজ হতো।’ চাহিদা বাড়লেও অবকাঠামোয় পিছিয়ে : এই সেবার চাহিদা বাড়লেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। দেশের সব হেলিকপ্টার ওঠানামা নিয়ন্ত্রিত হয় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতা এই খাতের বড় বাধা। আগে দক্ষিণাংশে হেলিকপ্টার ওঠানামা হতো, বর্তমানে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের কারণে উত্তরাংশে অস্থায়ীভাবে এই কার্যক্রম চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এটি নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার জন্য অনুকূল নয়। নির্বাচনী মৌসুমে কেন ভাড়া বাড়ে? : হেলিকপ্টারের ভাড়া নির্ধারিত হয় দূরত্ব, মডেল (সিঙ্গল বা টুইন টারবাইন), আসনসংখ্যা ও ফ্লাইট ঘণ্টার ওপর ভিত্তি করে। দেশে দুই ধরনের হেলিকপ্টার চালু রয়েছে—এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট ও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট। এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ার সময় ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকা, ভূমিতে ঘণ্টাপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। এতে সর্বোচ্চ চারজন যাত্রী বহন করা যায়। এ ছাড়া বড় এক ইঞ্জিনের (ছয় আসন) হেলিকপ্টারের ভাড়া এক লাখ থেকে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট হেলিকপ্টারের ভাড়া দুই লাখ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। এতে সর্বোচ্চ সাতজন যাত্রী যেতে পারে। রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়ার ওপর ৩০ শতাংশ কর ছাড় দেওয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চার সিটের একটি হেলিকপ্টারের ভাড়া ৬৬ হাজার থেকে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আবার মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর অঞ্চলে লোকাল রাইড বা ইভেন্টভিত্তিক প্যাকেজ সেবার ভাড়া ধরা হয় ৯৫ হাজার থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী মৌসুমে ভাড়া সাধারণত ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। কারণ তখন একই দিন প্রার্থীদের একাধিক জেলা বা অঞ্চলে যেতে হয়। এতে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ে, অপেক্ষা বা স্ট্যান্ডবাই চার্জ যোগ হয় এবং বিভিন্ন পারমিটসংক্রান্ত খরচ যুক্ত হয়। তবে গন্তব্যের ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী ভাড়া কমে ও বাড়ে। নির্বাচনী চাহিদার ক্ষেত্র : একজন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী দিনে গড়ে তিন থেকে পাঁচটি সমাবেশে যোগ দেন। দুর্গম এলাকায় সড়কপথে যাতায়াত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই অনেক প্রার্থী হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এতে সময় বাঁচে, ঝুঁকি কমে এবং কর্মসূচি সহজে সম্পন্ন করা যায়। এ ছাড়া দেশজুড়ে ব্যবসায়ী বা বিদেশি অতিথিদের সময় বাঁচাতে করপোরেট চার্টার একটি বড় খাত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিদেশি ডেলিগেট ও ভিআইপি ভ্রমণে টুইন টারবাইন হেলিকপ্টারের চাহিদা বেশি। কিভাবে পাওয়া যায় অনুমতি? : হেলিকপ্টার ব্যবহারের জন্য কয়েক ধাপের অনুমতি নিতে হয়। প্রথমত, বেবিচকের কাছে অনুমোদিত ফ্লাইট প্ল্যান জমা দিতে হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, উড্ডয়নের অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে এই প্ল্যান জমা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, হেলিপ্যাড বা হেলিপোর্টের অনুমতি প্রয়োজন। এতে সিএএবি, ফায়ার সার্ভিস ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ছাড়পত্র নিতে হয়। ২০২৩ সালে রুফটপ হেলিপ্যাড নীতিমালার অনুমোদন দেওয়ার পর ছাদে অবতরণ আংশিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে, তবে তা শুধু নিরাপদ ও অনুমোদিত স্থানে। তৃতীয়ত, ঢাকার বাইরে উন্মুক্ত মাঠ, স্টেডিয়াম বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অবতরণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। অপারেটররা যা বলছে : ফ্লাই ট্যাক্সসি এভিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর কে রিপন বলেন, ‘দেশে আয়ের স্তর বাড়ছে, লাইফস্টাইল বদলাচ্ছে, চাহিদাও বাড়ছে। তাই হেলিকপ্টার ব্যবসাও লাভবান হচ্ছে।’ আর অ্যান্ড আর এভিয়েশনের ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা মূলত রোগী পরিবহনে বেশি ফোকাস করি। নির্বাচনী সময় মেডিভ্যাকসেবার চাহিদাও বাড়ে।’ নির্বাচনী সময় ভাড়া ও লজিস্টিক : অভ্যন্তরীণ চার্টারে নিকটবর্তী জেলায় (৫০ থেকে ৮০ নটিক্যাল মাইল) চার সিটের জ৬৬ মডেলের ভাড়া ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ইবষষ ৪০৭ (পাঁচ-ছয় সিট) মডেলের ভাড়া এক লাখ ২৫ হাজার থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চার সিটের ভাড়া ৬৬ হাজার থেকে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রার্থীদের জন্য শুধু ভাড়া নয়, স্ট্যান্ডবাই চার্জ, জ্বালানি-লজিস্টিক, ক্রু অ্যালাউন্স ও পারমিটসংক্রান্ত খরচও যুক্ত হয়। তাই আগাম বাজেট পরিকল্পনা জরুরি। সম্ভাব্য ঝুঁকি ও করণীয় : ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টায় কুয়াশার কারণে ভিজিবিলিটি কমে যায়। ফলে সকালে উড্ডয়ন অনেক সময় সম্ভব হয় না। অপারেটররা তাই নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভিজ্যুয়াল ফ্লাইট রুলস অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করে। শুল্ককর ও নীতিগত জটিলতা : ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, সরকার হেলিকপ্টারকে ‘শৌখিন বাহন’ মনে করে উচ্চহারে কর ও শুল্ক আরোপ করেছে। যাত্রীর দেওয়া ভাড়ার প্রায় ৪৫ শতাংশ চলে যায় ভ্যাট ও ট্যাক্সে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। সামনের চ্যালেঞ্জ : খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হেলিকপ্টারসেবার বাজার দেশে দিন দিন বিস্তৃত হলেও অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন এবং কর-শুল্কে ছাড় না দিলে খাতটির টেকসই প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব মফিজুর রহমান বলেন, ‘শীত মৌসুম হেলিকপ্টারসেবার জন্য পিক সিজন। তবে বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির। এতে হেলিকপ্টারসেবার চাহিদা নাজুক অবস্থায় আছে। অনেক হেলিকপ্টার অপারেটর রুগ্ণ হয়ে গেছে।’ খাতটির নীতিমালা ব্যবসাবান্ধব নয় বলে মনে করেন এওএবি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে হেলিপোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সরকারের বাধার কারণে হয়নি। হাসপাতাল বা করপোরেট ভবনের ছাদে হেলিপোর্ট তৈরির অনুমতি দিলে রোগী পরিবহন সহজ হতো। ব্যক্তি খাতে হেলিপোর্ট নির্মাণের কাজও স্থবির। বিমানবন্দর থেকে হেলিপোর্টসেবা না সরানোর ব্যাপারে বেবিচকের নেতিবাচক মনোভাব আছে।’ আমারবাঙলা/এফএইচ

from Amarbangla sodesh Feed https://ift.tt/x2OYnWC

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies