Type Here to Get Search Results !

রপ্তানি প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের বড় ব্যবহার হয় রপ্তানি খাতে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক উৎপাদনে বিদেশি ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের কাছে পণ্যের স্যাম্পল বা নমুনা আনা-নেওয়ার কাজে কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে থাকেন রপ্তানিকারকরা। আমদানি করা কিছু অ্যাক্সেসরিজ ও হালকা যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন দলিলপত্র ও পার্সেলের জন্যও কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করা হয়। শুধু তৈরি পোশাকের স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অন্তত এক মাস পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। পণ্য পুড়লে ক্ষতির পরিমাণ অনুমানকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। অবশ্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ঘটনাস্থলে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতি শুধু আমদানি পণ্যের বেলায় হয়েছে। রপ্তানি পণ্য নিরাপদ আছে। তৈরি পোশাক ছাড়া, ওষুধ শিল্পের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা, বিশেষ করে শাকসবজি ও অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানির জন্য এই কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করেন। আগুনে কার্গো ভিলেজে থাকা ওই সব পণ্য পুড়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু করেছে। তবে ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত হাজার কোটি টাকা। পোশাকের স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানিতে লিড টাইমে অন্তত এক মাস পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। লিড টাইম হচ্ছে, ব্র্যান্ড-ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্যাম্পল পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় শেষে চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদন করে তাদের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়। উদ্যোক্তারা ধারণা করছেন, কার্গো ভিলেজে থাকা সব স্যাম্পল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে স্যাম্পল আনা, স্যাম্পল তৈরি এবং ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের অনুমোদন নেওয়া পর্যন্ত অন্তত এক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। জানতে চাইলে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিককারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি এনামুল হক বাবলু বলেন, অগ্নিকাণ্ডে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল রপ্তানি খাতে। পোশাকের স্যাম্পলসহ অন্যান্য কী পরিমাণ পণ্য আগুনে পুড়েছে, তার অর্থমূল্য নির্ধারণ করার কাজ শুরু করেছে বিজিএমইএ। প্রমাণসহ ক্ষতির পরিমাণ জানাতে সদস্য কারখানাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজের কারখানা অনন্ত অ্যাপারেলসের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, স্যাম্পলের উচিত মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না। একটা টোকেন মূল্য নেওয়া হয়। তাতেই তাঁর কারখানার ৪০ হাজার ডলারের ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে। কারণ পাঁচ দিনের ব্যবধানে তিন বড় অগ্নিকাণ্ড এবং চট্টগ্রামের সেরা কারখানা প্যাসিফিক জিন্সের সাতটি কারখানায় শ্রমিকদের ষড়যন্ত্রে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে। তৈরি পোশাকের নিট খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম পাঁচ দিনের ব্যবধানের শিল্পকারখানা এবং বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। গত রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই ঘটনাটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এর পেছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত শুরু করা উচিত। কারণ, গত কয়েক দিনে স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী একাধিক পোশাক কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। কার্গো ভিলেজের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে, এটি কতটা অনিরাপদ। গত কয়েক বছর ধরেই আমরা রপ্তানিকারকরা অভিযোগ করে আসছি, আমাদের পণ্য খোলা জায়গায় রাখা হয়, যা নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রপ্তানিকারকদের ক্ষতির পরিমাণ এই মুহূর্তে নির্ধারণ করা কঠিন। চট্টগ্রাম ইপিজেডে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের পর কার্গো ভিলেজে একই ধরনের ঘটনা উদ্যোক্তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের যে অংশে কুরিয়ার সার্ভিসের কাজকর্ম চলে, সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্পের জরুরি কাঁচামাল ছিল এই কার্গো ভিলেজে। বিশেষ করে আমদানি করা দামি মোবাইল ফোনও থাকে এই ভিলেজে। এখন সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। ফলে দুদিনে বিমানের যত ফ্লাইটে পণ্য এসেছে, সেগুলো হস্তান্তরের কোনো কাজ হয়নি। এখন সবই পুড়েছে। কুরিয়ার সার্ভিস সেকশনের শেডের বাইরেও উড়োজাহাজ থেকে অনেক মালপত্র নামিয়ে রাখা হয়েছিল। সেগুলোও পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়েছে। ফারুক আলম বলেন, রপ্তানিকারকরাও বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। কারণ, অনেকেই রপ্তানিমুখী পণ্যের জরুরি কাঁচামাল আমদানি করেছেন। এখন সেগুলো পুড়ে যাওয়ায় রপ্তানির লিড টাইম বাড়বে। এতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি। আমারবাঙলা/এফএইচ

from Amarbangla sodesh Feed https://ift.tt/6TWaLQY

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies