জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে ঐকমত্য কমিশন। দলগুলো একমত না হলে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে সনদ কার্যকর করা, ১০৬ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিষয়ে আদালতের মতামত গ্রহণ কিংবা গণপরিষদে সংবিধান সংস্কারের যেসব পরামর্শ বিশেষজ্ঞ প্যানেল দিয়েছে, সেগুলো সরকারকে সুপারিশ করা হবে। গতকাল শনিবার সংসদ ভবনের কার্যালয়ে বৈঠকের পর কমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগে সকাল ১০টায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। আগামী মঙ্গলবারও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হবে। ভাষাগত পরিমার্জন চললেও জুলাই সনদের মূল রূপ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন। সনদে সংস্কারের ৮৪টি সিদ্ধান্ত রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে না থাকা, কমিটির মাধ্যমে দুদকের নিয়োগসহ ৯ সিদ্ধান্তে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছে। অন্য দল আরও দুটি সিদ্ধান্তে আপত্তি দিয়েছে। দলগুলো জানিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে নোট অব ডিসেন্ট থাকা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে না। তবে পুরো সনদই আটকে রয়েছে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে। কমিশন গত ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সংলাপে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রস্তাব করে, সাংবিধানিক আদেশে সনদ কার্যকর করা হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হবে গণভোট। বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো সাংবিধানিক আদেশের বিরোধী। বিএনপি পরবর্তী সংসদে দুই বছরে সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়ন চায়। তবে ১৭ সেপ্টেম্বরের সংলাপে প্রস্তাব করে, সরকারের সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা রয়েছে কিনা– এ বিষয়ে ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে হবে। আগামী সংসদে হবে সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার। তারপর তা গণভোটে দেওয়া হবে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি দল নির্বাচনের আগেই সাংবিধানিক আদেশে সংবিধানের সংস্কার কার্যকর এবং গণভোট চায়। এনসিপি এবং গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল গণপরিষদ বা সংবিধান সভা গঠন করে সংস্কার বাস্তবায়ন চায়। সাংবিধানিক আদেশ এবং নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট– এই প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল নতুন করে দুটি প্যাকেজ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী, সাংবিধানিক আদেশে সনদ কার্যকর করা হবে। এর পর ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে গণভোট আয়োজন করা হবে। দ্বিতীয় প্যাকেজে রয়েছে, আগামী নির্বাচনে সংসদ গণপরিষদ বা সংবিধান সভা গঠন হবে। সাংবিধানিক সংস্কারের পর গণভোট হবে। এরপর গণপরিষদ সংসদে রূপান্তর হবে। গতকাল কমিশনের সভায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং রাজনৈতিক দলের অভিমত পুনঃবিশ্লেষণ করা হয়েছে। কমিশন সূত্র জানায়, সব রাজনৈতিক দলের মতামত প্রতিফলিত হয় এমন একটি তৃতীয় বিকল্প প্রস্তাব খোঁজা হচ্ছে। তবে সেখানে কারও মত পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিফলন হবে না। ১৭ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে ছয়টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি ছিল। কমিশন সেদিন দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল, ১৫ দিনের বিরতিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি পদ্ধতিতে একমত হতে। এই সময়ে কমিশনও দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়েছে। গতকালের বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আজ সংলাপে দলগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হবে– তারা কোনো একটি পদ্ধতিতে একমত হতে পেরেছে কিনা? যদি দলগুলো একমত হতে পারে, তবে বাস্তবায়ন পদ্ধতি হিসেবে সেটিকেই সুপারিশ করবে কমিশন। দলগুলো একমত হলে, বিশেষজ্ঞদের দেওয়া দুই প্যাকেজ প্রস্তাব আলোচনায় উত্থাপন করা হবে। এতে দলগুলোর মত নেওয়া হবে। মঙ্গলবার দলগুলোর সিদ্ধান্ত জানবে কমিশন। সেই দিন পর্যন্ত দলগুলো একমত হতে পারলে কমিশন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকেই বাস্তবায়ন পদ্ধতি হিসেবে সরকারকে সুপারিশ করবে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আশা করি, দলগুলো একমত হবে। তারা নিজেরাই বলেছিল, এ প্রচেষ্টা চালাবে। যদি একমত হতে না পারে, তবে অধিকাংশ দল একমত হয়ে যদি একটা প্রস্তাব আনতে পারে, তা বিবেচনা করা হবে। কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ, অর্থাৎ আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ সই হবে। কমিশন সোমবার বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সর্বশেষ বৈঠক করতে চায় বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া মতামত নিয়ে সোমবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করতে চায় কমিশন। এদিকে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের ভাষাগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় সংযোজন-বিয়োজন করছে কমিশন। সংশোধিত ভাষ্যটি আজ দলগুলোর কাছে পাঠানো হতে পারে। আমারবাঙলা/এফএইচ
from Amarbangla sodesh Feed https://ift.tt/sYePQWp
রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে কার্যকর হবে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ
October 04, 2025
0