Type Here to Get Search Results !

তিস্তা প্রকল্পে ৫৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে চীন

দেশের উন্নয়নে বড় কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্য খাতের হাসপাতাল নির্মাণ থেকে শুরু করে তিস্তা নদী পুনঃব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, কক্সবাজার বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ কিংবা নতুন সেতু নির্মাণ—প্রায় সব খাতেই বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। তবে এসব উদ্যোগের ভাগ্য নির্ভর করছে বিদেশি সহায়তার ওপর। আর এ সহায়তা কতটা পাওয়া যাবে এবং কোন প্রকল্প কতটা অগ্রাধিকার পাবে, তা ঠিক করতে আজ বুধবার বৈঠকে বসছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান কমিটি। বৈঠকে আলোচনায় উঠছে মোট ৩৬টি প্রকল্প। এগুলোর যৌক্তিকতা, বাস্তবতা আর অর্থায়নের নিশ্চয়তা নিয়ে শুরু হবে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পক্ষ থেকে বৈদেশিক সহায়তার জন্য একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। ইআরডি সূত্র বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ নন-কনসেশনাল ঋণ (কঠিন শর্তের ঋণ) থেকে এসেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায়। এ কারণে কনসেশনাল ঋণের উৎসগুলো ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো সংস্থা থেকে সহজ শর্তের ঋণ কমে যাওয়ায় নন-কনসেশনাল লোনের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে। নন-কনসেশনাল ঋণ কীভাবে আরো কম সুদে নেওয়া যায়, তা নিয়ে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব প্রকল্প এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলো সাধারণত এ ধরনের সভায় রাখা হয়। অধিবেশনগুলোয় প্রকল্পগুলোর যৌক্তিকতা, বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা এবং উন্নয়ন অংশীদার বা দাতা দেশগুলোর সঙ্গে আগের আলোচনার ফলোআপ পর্যালোচনা করা হয়। তারা বলছেন, তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প (টিআরসিএমআরপি) ফেজ-১ শিরোনামে তিস্তা উদ্যোগের প্রথম পর্যায়ও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) প্রায় ৭৫ কোটি ডলার আনুমানিক ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য প্রায় ১৭১ বর্গকিলোমিটার জমি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন করা, যার প্রায় ৫৫ কোটি ডলার চীনা ঋণ থেকে আসবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরো দুটি প্রকল্প ‘অ্যাডাপ্টিভ রিভার সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট (এআরএসএমপি)’ এবং ‘মেট্রো ঢাকা ওয়াটার সিকিউরিটি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম (বিডব্লিউডিবি কম্পোনেন্ট, ফেজ-১)’ সভায় উত্থাপন করা হবে। সভায় বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রামের পর্যালোচনাও করা হবে, যা দুই হাজার ১৩৯ কোটি টাকা চীনা অনুদানে বাস্তবায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের সরঞ্জাম উপাদানের জন্য একই উৎস থেকে ৬০৯ কোটি টাকা অনুদান সহায়তা পাওয়া যাবে। আজকের বৈঠকের আলোচনায় প্রথমেই আসছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৩১টি ছোট পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও পরিবেশগত স্যানিটেশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রস্তাব করছে লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ এড়াতে পানি গ্রহণ কেন্দ্র স্থানান্তর ও মোহরা পানি শোধনাগারের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প। সিলেট সিটি করপোরেশন উপস্থাপন করছে সুরমা নদীর দুই পারে বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ, খালমুখে স্লুইসগেট ও পাম্প স্টেশন স্থাপন এবং ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন প্রকল্প। পাশাপাশি থাকবে স্থানীয় সরকার উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা (লজিক)-দ্বিতীয় ধাপ প্রকল্প। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে আলোচনায় আসছে গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের নিচে সেতু নির্মাণ প্রকল্প। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে আসবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্প এবং রায়পুরায় ১৫০ মেগাওয়াট গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করছে, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য চারটি নতুন জাহাজ সংগ্রহ প্রকল্প, যার মধ্যে রয়েছে দুটি ৪০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন তেলবাহী ট্যাংকার এবং দুটি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বাল্ক ক্যারিয়ার। একই সঙ্গে উপস্থাপন করা হচ্ছে ধীরাশ্রম রেলস্টেশনের কাছে একটি নতুন অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ প্রকল্প। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আলোচনায় আসবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর রেলপথে বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন বাস্তবায়ন প্রকল্প। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আনছে তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প (প্রথম ধাপ) এবং খাপ খাওয়ানো নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। দুটি প্রকল্পই বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি)। একই সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে মেট্রো ঢাকা পানি নিরাপত্তা ও স্থিতিস্থাপকতা কর্মসূচি (বিডব্লিউডিবি উপাদান, প্রথম ধাপ)। স্বাস্থ্য খাতের একাধিক প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সাধারণ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম; একই হাসপাতালের যন্ত্রপাতি উন্নয়ন উপাদান; বাংলাদেশ বিষ গবেষণা কেন্দ্র শক্তিশালীকরণ প্রকল্প; জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলো শক্তিশালীকরণ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। অবকাঠামো উন্নয়নে আলোচনায় আসবে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় ধাপ) এবং সড়ক খাতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর ওপর দ্বিতীয় মুক্তারপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্প। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে উপস্থাপন করা হচ্ছে নবীন উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জোরদার প্রকল্প, বাংলাদেশে স্মার্ট কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন প্রকল্প এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (ফোরআইআর) গবেষণা ও উদ্ভাবন পার্ক স্থাপন প্রকল্প। এছাড়া চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বাড়াতে প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। সভায় এসব প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব বিবেচনা এবং বিদেশি সহায়তা সংগ্রহের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে—হাসপাতাল নির্মাণ, ভেনম রিসার্চ সেন্টার শক্তিশালীকরণ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা উন্নীতকরণ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আরো তিনটি প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলো হলো—ভেনম রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ (ভিআরসিবি) শক্তিশালীকরণ, বাংলাদেশে জেলাপর্যায়ের হাসপাতাল শক্তিশালীকরণ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শক্তিশালীকরণ। তিনটি প্রকল্পই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) বাস্তবায়ন করবে। তালিকায় অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ (ডিপিএইচই) দ্বারা বাস্তবায়িত ৩১টি ছোট পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পানি সরবরাহ ও পরিবেশগত স্যানিটেশনের প্রস্তাব রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ময়মনসিংহ অঞ্চলে ট্রান্সমিশন গ্রিড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে, যা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ পিএলসি কর্তৃক গৃহীত হবে এবং রায়পুরা ১৫০ মেগাওয়াট (এসি) গ্রিড-টাইড সোলার পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পটি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) কর্তৃক জিটুজি ব্যবস্থার মাধ্যমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চারটি নতুন জাহাজ ৪০ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতার দুটি রাসায়নিক/পণ্য তেল ট্যাংকার এবং ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতার দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার জন্য একটি প্রকল্প জমা দিয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় দুটি প্রকল্প তালিকাভুক্ত করেছে—ধীরাশ্রম রেলস্টেশনের কাছে একটি নতুন ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ এবং নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর সেকশনে বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন বাস্তবায়ন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) এগিয়ে নিয়েছে, যা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া আইসিটি বিভাগের এটুআই পরিচালিত উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জোরদার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি বিপণন বিভাগের (ডিএএম) মাধ্যমে বাংলাদেশে স্মার্ট কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন প্রকল্প জমা দিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—বুয়েটের বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধীন ফোরআইআর গবেষণা ও উদ্ভাবন পার্ক স্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও প্রাণিবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভিএসইউ) একাডেমিক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সুবিধা স্থাপন ও জোরদারকরণ। আমারবাঙলা/এফএইচ

from Amarbangla sodesh Feed https://ift.tt/aPpND4T

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies