Type Here to Get Search Results !

উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পর্যালোচনা করবে জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের একটি কার্যালয় (কান্ট্রি অফিস) ঢাকায় স্থাপনের প্রস্তাবের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে জাতিসংঘ বলেছে, উপদেষ্টা পরিষদ কী অনুমোদন দিয়েছে, সে ব্যাপারে তারা বিস্তারিত জানে না। সই করার আগে জাতিসংঘ এটি পর্যালোচনা করবে। রবিবার (২৯ জুন) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, ঢাকায় প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়। মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাইলে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) এক কর্মকর্তা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ কী অনুমোদন দিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। কারণ ২৫ এপ্রিল যখন সমঝোতার খসড়ায় জাতিসংঘ তাদের চাহিদাগুলো দিয়েছে, এর পর তাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা জানতে পেরেছেন খসড়ায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তিত খসড়া তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়নি। ফলে অনুমোদন হওয়া খসড়া সমঝোতা সইয়ের বিষয়ে তাদের তরফে নিশ্চয়তা নেই। তারা খসড়াটি পেলে পর্যালোচনা করবেন। ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশে কার্যালয় চায়। আর এটি হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রীতিতে। ফলে যে সমঝোতাই হোক না কেন, সেটি হতে হবে দু’পক্ষের সম্মতিতে। ওএইচসিএইচআরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো চুক্তি ও সমঝোতা দরকষাকষি হয় জেনেভায় স্থায়ী মিশনে। এখানে বাংলাদেশ অংশের আলোচনার মূল কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। সেখানে দরকষাকষির মাধ্যমে যা চূড়ান্ত হবে, তা স্থায়ী মিশন সরকারকে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে পারে। এ খসড়া সমঝোতার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলে সাড়া দেননি তিনি। মেসেজ পাঠানো হলেও উত্তর দেননি। মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে নীতিগত সম্মতি রবিবার আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়ের একটি শাখা ঢাকায় চালুর বিষয়ে একটা খসড়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। আমরা কয়েকজন উপদেষ্টা এটা পরীক্ষা করব। পরীক্ষার পর সেটাকে চূড়ান্ত করে মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের কাছে পাঠাব। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হবে। প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য এ কার্যালয় স্থাপন করা হবে। পরে দুই পক্ষ যদি মনে করে এটা পুনর্নবায়ন করা দরকার, তাহলে এটা আরও বাড়তে পারে। যেভাবে এলো প্রস্তাব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত অক্টোবরের শেষ দিকে ঢাকা সফর করেন জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের ভলকার তুর্ক। বাংলাদেশ সফরে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেন ভলকার তুর্ক। ওই সময় সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। আর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। আর সংবাদ সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর পরিবর্তে বাংলাদেশে এ কার্যালয় স্থাপন নিয়ে ভলকার তুর্ক জানিয়েছিলেন, মানবাধিকার নিয়ে বেশি কিছু ভুল তথ্য রয়েছে। এটিকে কেউ পশ্চিমা তত্ত্ব হিসেবে দেখে, আবার কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে, আবার অনেকের এটিকে চাপিয়ে দেওয়া দৃষ্টিভঙ্গিতেও দেখে। পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে বিশ্বের সব দেশে এ কার্যালয় স্থাপন করা যায়নি। এ কারণে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এ পরিবর্তন সহজ নয়। বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। আর আমরা সেই প্রস্তাবই দিয়েছি। সরকারের ভেতরে বিরোধিতা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, কার্যালয় ও মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের কান্ট্রি অফিস খোলার বিষয়ে একমত নয়। তাদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো বিরোধী শক্তিকে দমনে মানবাধিকারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। গত ৩ জুন জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো অংশগ্রহণ করে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি প্রশ্ন তোলেন– যেসব দেশে এ কার্যালয় রয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সার্বিক বিচারে তুলনীয় কিনা। ১৬ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম যুক্ত করা ঠিক হবে কিনা– তা ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। বৈঠকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হবে, নাকি হোস্ট কান্ট্রি চুক্তি সই হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যেহেতু বাংলাদেশ হোস্ট কান্ট্রি চুক্তি সই করেছে, ফলে এ ক্ষেত্রে সমোঝতা সই করলে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বৈঠকে একটি আইনশৃঙ্খলা সংস্থার প্রতিনিধি জাতিসংঘের কান্ট্রি অফিস খোলার বদলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সামর্থ্য বাড়াতে পরামর্শ দেন। এ মুহূর্তে এই কার্যালয় বাংলাদেশে খোলা যৌক্তিক হবে না বলেও মত দেন তিনি। সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, সভায় অনেকে নিজ নিজ সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মত তুলে ধরেন। যদি এ-সংক্রান্ত কার্যালয় খুলতেও হয়, তবে যেভাবে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, সেভাবে চুক্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ ওএইচসিএইচআরের প্রস্তাবিত খসড়ায় দায়মুক্তিসহ এমনসব ধারা রয়েছে, যা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিতে নেই। উন্নত কোনো দেশে নেই এ কার্যালয় বিশ্বের উন্নত কোনো দেশ জাতিসংঘকে মানবাধিকার কার্যালয় খোলার অনুমতি দেয়নি। কারণ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পশ্চিমারা অনুন্নত দেশগুলোতে মানবাধিকারকে এক প্রকার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আর বিশ্বের প্রতিটি দেশেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা রয়েছে। তবে উন্নত দেশগুলো তাদের নিজ দেশে এসব কার্যালয় খুলতে অনুমতি দেয়নি। জাতিসংঘের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১৬ দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকারের এমন কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রধান কার্যালয় এবং আন্তঃদেশীয় সমন্বয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি কার্যালয় আছে। দেশগুলোতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, আটক অবস্থায় নির্যাতন ও মৃত্যু, বৈষম্য, সমকামীদের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ মানবাধিকার-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে এ কার্যালয়। কান্ট্রি অফিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে মানবাধিকার সুরক্ষা ও প্রসারে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দেনদরবার করে থাকে জাতিসংঘ। এ ম্যান্ডেটের মধ্যে সাধারণত মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ, সুরক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার, নাগরিক সমাজ, ভিকটিম এবং অন্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে সংস্থাটি। কান্ট্রি অফিস আছে এমন দেশগুলো হলো– বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেন। এর বাইরে উত্তর কোরিয়াকে দেখভালের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াতে একটি এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইউক্রেনে একটি কার্যক্রম রয়েছে ওএইচসিএইচআরের। এর বাইরে ১৩ আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে ওএইচসিএইচআরের। আর বাংলাদেশসহ ৪৩টি দেশে এ কার্যালয় স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে সংস্থাটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব দেশে এর কার্যালয় খোলা হয়েছে বা খুলতে অনুরোধ করেছে, এর সবই পশ্চিমা জোটের বিপরীত শক্তি অথবা অনুন্নত দেশ। এ কার্যালয় স্থাপন চায় পশ্চিমারা বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকারের একটি কার্যালয় দেখতে চায় পশ্চিমারা। বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি অফিস খোলার আগেই কয়েকটি পশ্চিমা দেশ তহবিল দিয়েছে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে পশ্চিমা দেশের এক রাষ্ট্রদূত নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তাদের তহবিল দিতে সম্মত হয়েছি। কয়েকটি দেশ দিয়েছেও। আমারবাঙলা/জিজি

from Amarbangla sodesh Feed https://ift.tt/t5bQqK7

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies